ছবি: মানব ভ্রুণ এবং হাঙ্গর ভ্রুণ ( সুত্র : নোভা/পিবিএস। ভ্রুণের ছবির ইলাস্ট্রেশন কাল্লিওপি মনোইয়োস,Your Inner Fish: A Journey Into the 3.5 Billion-Year History of the Human Body (Pantheon Books 2008) বই থেকে নেয়া); বড় করে দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন ;
ছবি: আমাদের শরীরে বিবর্তনের অনেক চিহ্নের একটি; শুক্রনালীর এই বাকা পথ বেছে নেবার ইতিহাস পুরুষদের যৌনগ্রন্থির বৃদ্ধি আর ক্রমবিকাশের সাথে সম্পৃক্ত। হাঙ্গর,মাছ এবং অন্যান্য অস্থিবিশিষ্ট প্রানীদের মতই মানুষেরও যৌনগ্রন্থির বৃদ্ধি আর ক্রমবিকাশ ঘটে। গোনাড বা যৌনগ্রন্থি :পুরুষদের অণ্ডকোষ এবং মহিলাদের ডিম্বাশয়,উভয় ক্ষেত্রেই ভ্রুণাবস্থায় তাদের অবস্থান থাকে শরীরের উপরের অংশে, যকৃত বা লিভারের কাছাকাছি, কারণ যে সকল কোষ সমুহের পারস্পরিক অবস্থান এবং সহযোগিতা থেকে এসব গ্রন্থির সৃষ্টি হয়, তাদের অবস্থান সম্ভবত এখানে বলে ধারনা করা হয়। পুর্নবয়স্ক হাঙ্গর বা মাছের যৌনগ্রন্থি সাধারনত: শরীরের উপরিভাগে যকৃতের কাছাকাছি থাকে এবং তারা তাদের এই আদি অবস্থানেই থাকে কারণ তাদের শুক্রাণু শরীরের অভ্যন্তরেই ক্রমবিকাশ এবং পূর্ণতা লাভ করতে পারে। আমাদের মত স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। পুরুষ ভ্রুন যখন বেড়ে উঠতে থাকে, তাদের যৌনগ্রন্থিও ধীরে ধীরে নীচে নামতে থাকে, স্ত্রী ভ্রুনদের ক্ষেত্রে এই নেমে আসাটা শরীরের ভিতরে নীচে অবস্থিত জরায়ু এবং ফেলোপিয়ান টিউবের কাছে এসে থেমে যায়, যা নিশ্চিৎ করে ডিম্বানুকে যেন জরায়ু গহবরে নিষিক্ত হবার জন্য বেশী দুরত্ব অতিক্রম না করতে হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে আরো নীচের দিকে নেমে আসে অন্ডকোষ, একেবারে স্ক্রোটাম বা অন্ডকোষের থলিতে, যা দেহের সামনে ঝুলে থাকে। কার্য্যক্ষম শুক্রানু তৈরী করার জন্য এই নেমে আসার বিষয়টা অত্যন্ত্য গুরুত্বপুর্ণ। এর একটা সম্ভাব্য কারণ হিসাবে মনে করা হয় যে, স্তন্যপায়ীরা উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট এবং শুক্রানুর সংখ্যা ও এর গুনগত মান দুটোই নির্ভর করে আমাদের মুল শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা অপেক্ষা কম কোন তাপমাত্রা বিশিষ্ট কোন স্থানে ক্রমবিকশিত হওয়ার উপর। সেকারনেই স্তন্যপায়ীদের অন্ডকোষ, শরীরের ভিতরের উষ্ণতা থেকে অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণ শরীরের বাইরের অন্ডকোষের থলিতে অবস্থান করে, এই থলিটি তাপমাত্রা বাড়া কমার সাথে ওঠানামা (থলির গায়ের পেশীর সংকোচন এবং প্রসারনের মাধ্যমে) করে শুক্রানুর সুষ্ঠু বৃদ্ধিকে নিশ্চিৎ করে। বড় করে দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন;
কিংবা এই লেখাটিও দেখতে পারেন : আমাদের প্রাচীন শরীর
জেরী কয়েন এর হোয়াই ইভোল্যুশন ইজ ট্রু : তৃতীয় অধ্যায় (তৃতীয় পর্ব)
(অনুবাদ প্রচেষ্টা: কাজী মাহবুব হাসান)
Why Evolution Is True: Jerry A. Coyne
প্রথম অধ্যায়
দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রথম পর্ব ; দ্বিতীয় পর্ব ; তৃতীয় পর্ব ; চতুর্থ পর্ব; শেষ পর্ব
তৃতীয় অধ্যায়: প্রথম পর্ব , দ্বিতীয় পর্ব
অবশিষ্টাংশ: ভেস্টিজ, ভ্রূণ এবং খারাপ ডিজাইন
ভ্রুণের প্যালিম্পসেস্ট
ডারউইনের সময়ের অনেক আগে থেকেই জীববিজ্ঞানীরা ব্যস্ত ছিলেন ভ্রুনতত্ত্ব বা এমব্রায়োলজী ( কেমন করে প্রানীরা ভ্রুণ থেকে ক্রমবিকশিত হয়) এবং তুলনামুলক অ্যানাটমী ( বিভিন্ন প্রানীদের গঠনগত সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা) নিয়ে গবেষনায়। তাদের সম্মিলিত কাজ বহু অদ্ভুত বৈশিষ্টর সন্ধান পেয়েছিল, সেই সময় যার কোন অর্থ তারা বুঝতে পারেন নি। যেমন, সব মেরুদন্ডী প্রানী তাদের ভ্রুণ ক্রমবিকাশ শুরু করে একই প্রক্রিয়ায়, যা দেখতে অনেকটা মাছের ভ্রুণের মত। এই ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশ প্রক্রিয় যতই অগ্রসর হয়, বিভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্টসুচক নানা রুপ প্রকাশ পেতে শুরু করে-কিন্তু অদ্ভুত সব উপায়ে। কিছু রক্তনালী, স্নায়ু এবং অঙ্গ যা সব প্রজাতির ভ্রুণে থাকে সেগুলো হঠাৎ করে অপসৃত হতে শুরু করে এবং বাকীগুলো অদ্ভুত সব আকাবাকা পথ নিতে দেখা যায় এবং অবশেষে এই ভ্রুততাত্ত্বিক বিকাশ প্রক্রিয়ার নৃত্য সমাপ্ত হয় বিভিন্ন পুর্ণবয়স্ক প্রানী, যেমন মাছ, সরীসৃপ, পাখি, উভচরী এবং স্তন্যপায়ী রুপ ধারন করার মাধ্যমে। যখন তাদের সবার ভ্রুনতাত্ত্বিক বিকাশ শুরু হয়েছে তারা দেখতে অনেক বেশী পরস্পর সদৃশ ছিল। ডারউইন একটি কাহিনীটির বর্ণনা দিয়েছিলেন কিভাবে বিখ্যাত জার্মান ভ্রুণতত্ত্ববিদ কার্ল আর্ণষ্ট ভন বায়ের ধাধার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন মেরুদন্ডী প্রাণীদের ভ্রুণদের পারস্পরিক সাদৃশ্যতা লক্ষ্য করে। ভন বায়ের ডারউইনকে লিখেছিলেন:
আমার কাছে স্পিরিট (অ্যালকোহল) এ ডোবানো দুটি ভ্রুণ আছে, যাদের নাম আমি ভুলে গিয়েছিলাম কাচের বোতলের গায়ে লাগাতে এবং বর্তমানে আমি সম্পুর্ণ অপারগ তারা কোন শ্রেনীতে পড়বে সেই বিষয়টি শনাক্ত করার জন্য। তারা লিজার্ড বা ছোট পাখিও হতে পারে বা খুবই তরুন কোন স্তন্যপায়ী, তাদের মাথা ও শরীরের তৈরী হবার প্রক্রিয়াটা প্রায় পুরোপুরি সদৃশ্যতা প্রদর্শন করে;
এবং আবারও ডারউইনই তার সময়ে ভ্রুণতত্ত্বের পাঠ্যবইতে থাকা নানা পরস্পরবিরোধী তথ্যগুলোকে একসুত্রে বাধতে সক্ষম হয়েছিলেন।এবং তিনি প্রদর্শন করেন যে, ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের হতবাক করা বৈশিষ্টগুলো ঠিকই অর্থবহ হয়ে উঠে তার একীভুত করা বিবর্তনের ধারনায়।
ভ্রুণতত্ত্ব অনেক উৎসাহও বাড়িয়ে দিয়েছে; যখন আমরা এভাবে কোন ভ্রুনের দিকে তাকাই একটি ছবি হিসাবে, কম বেশী অস্পষ্ট, প্রতিটি বড় শ্রেনীর প্রানীদের কমন প্যারেন্ট রুপটা দেখতে পাই।
সব মেরুদন্ডী প্রানীদের মাছের মত ভ্রুণ নিয়েই শুরু করা যাক – হাতপা বিহীন এবং মাছের মত লেজ সহ; হয়তো মাছের মত সবচে দৃষ্টি আকর্ষনকারী বৈশিষ্ট হচ্ছে এর ভবিষ্যত মাথার কাছে ভ্রুণ
ধারাবাহিকভাবে সাজানো পাচ খেকে সাতটি স্ফীত কায় থলে বা পাউচগুলো, যারা মাঝখানে খাজ দিয়ে পরস্পর থেকে আলাদা;এই পাউচগুলোকে বলা হয় ব্রাঙ্কিয়াল আর্চ (Brianchial Arches) কিন্ত আমরা সংক্ষেপে বলি আর্চ। এই প্রতিটি আর্চে কোষ আছে যারা পরবর্তীতে স্নায়ু, রক্তনালী, মাংশপেশী এবং হাড় বা তরুণাস্থি সৃষ্টি করে। মাছ এবং হাঙ্গর এর ভ্রুণ যখন ক্রমবিকশিত হতে থাকে, প্রথম আর্চ থেকে তাদের চোয়াল তৈরী হয় এবং বাকীগুলোর ফুলকা তন্ত্রের অংশ হিসাবে গড়ে উঠে।এদের মাঝখানের খাজটা উন্মুক্ত হয়ে ফুলকার ছিদ্র তৈরী করে; পাউচগুলো মধ্যে স্নায়ু গড়ে উঠে যারা ফুলকার নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রন করে, রক্তনালী সৃষ্টি করে যারা পানি থেকে অক্সিজেন সরায় এবং হাড় ও কার্টিলেজ তৈরী করে যারা ফুলকার কাঠামোটিকে দৃঢ়তা দেয়। মাছ এবং হাঙ্গরে, তাহলে, ভ্রুণতাত্ত্বিক আর্চ থেকে ফুলকা সৃষ্টির পথ কম বেশী প্রত্যক্ষ।এই ভ্রুণতাত্ত্বিক বৈশিষ্টগুলো শুধু আকারে বড় হয় খুব একটা বড় কোন পরিবর্তন ছাড়াই পুর্ণবয়স্ক মাছের ফুলকা শ্বাস যন্ত্রে সৃষ্টি করে।
ছবি: হাঙ্গর ভ্রুণের ব্রাঙ্কিয়াল আর্চ (উপরে বায়ে) এবং একটি মানব ভ্রুণ (বায়ে নীচে): হাঙ্গর এবং মাছ ( যেমন বাস্কিং শার্ক Cetorhinus maximus উপরে ডানে ); এই আর্চগুলো তৈরী হয় সরাসরি পুর্ণবয়স্ক অবস্থার ফুলকার কাঠামোর উপর, এবং মানুষের ক্ষেত্রে ( এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী) তারা বিকশিত পুর্ণবয়স্ক শরীরের মাথা এবং শরীরের উপরের অংশে বিভিন্ন অঙ্গকাঠামোয়;
কিন্তু মাছের মত অন্য মেরুদন্ডী প্রানীদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় কোন ফুলকা থাকে না, এই আর্চগুলো রুপান্তরিত হয় সম্পুর্ণ ভিন্ন কিছু অঙ্গ কাঠামোয় – সে কাঠামোগুলো স্তন্যপায়ীদের মাথা তৈরী করে। যেমন স্তন্যপায়ীদের, তারা তিনটি ছোট ছোট মধ্য কানের হাড়, ইউস্ট্যাশিয়ান টিউব, ক্যারোটিড ধমনী, টনসিল, স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস এবং ক্রেনিয়াল স্নায়ুগুলো তৈরী করে; কখনো কখনো এই ভ্রুণতাত্ত্বিক ফুলকা বা গিল ছিদ্রগুলো মানব ভ্রুনে বন্ধ হয়ে যেতে ব্যার্থ হয়।যা ঘাড়ে সিস্ট বা থলে সহ মানব শিশু জন্ম হয়। এই সমস্যাটি আমাদের মাছ পুর্বসুরীদের একটি অ্যাটাভিস্টিক অবশিষ্টাং যা সহজেই সার্জারীর মাধ্যমে নিরাময় করা যেতে পারে।
আমাদের রক্তনালীগুলোকে আসলেই বিশেষভাবে নানা কসরত করে আকাবাকা পথ বেয়ে তার গন্তব্যে যেতে হয়, মাছ এবং হাঙ্গরে যেমন ভ্রুনাবস্থার রক্তনালীর প্যাটার্ণ পুর্ণাবস্থায় বা অ্যাডাল্ট প্রানীতে প্রায় অপরিবর্তিত থাকে সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া। কিন্তু অন্য মেরুদন্ডী প্রানীদের ক্ষেত্রে রক্তনালীগুলোকে বহুপথ ঘুরতে হয় এবং কখনো তাদের কিছু পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়। আমাদের মত স্তন্যপায়ীদের রয়ে যায় মুল ছয়টি থেকে তিনটি প্রধান রক্তনালী, আসল বিস্ময়কর বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের ভ্রুণতাত্ত্বিক ক্রমবিকাশ যখন অগ্রসর হয়, সকল পরিবর্তনও বিবর্তনীয় ধারাবাহিকতার পর্যায়গুলো অনুসরণ করে। শুরুতে আমাদের মাছদের মত রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র প্রথমে রুপান্তরিত হয় যেমন উভচরী প্রানীদের ভ্রুণদের সঞ্চালন তন্ত্রে থাকে। উভচারী প্রানীদের শরীরে এই সব ভ্রুণতাত্ত্বিক রক্তনালীগুলো সরাসরি রুপান্তরিত হয় তাদের পুর্ণাবস্থার রক্তনালীতে।কিন্তু আমাদের শরীরে তারা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং রুপান্তরিত এমন একটি রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র যার সাদৃশ্য আছে সরীসৃপের ভ্রুণের সাথে, সরীসৃপদের এই তন্ত্র সরাসরি রুপান্তরিত হয় তাদের পুর্ণাবস্থার রক্তনালীতে।কিন্তু আমাদেরটি আরো বেশ খানিকটা পরিবর্তিত হয়; আরো খানিকটা রদবদলের পর সত্যিকারের স্তন্যপায়ীদের ক্যারোটিড, পালমোনারী ও ডর্সাল ধমনী সহ সঞ্চালন তন্ত্রে রুপান্তরিত হয় (ছবি)।
এই প্যাটার্ণটা অবশ্যেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রথমত, কেন বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রানীরা, যারা দেখতে একে অপরের চেয়ে অনেক আলাদা, অথচ তাদের ভ্রুণতাত্তিক বিকাশ শুরু করে মাছের ভ্রুণের মত একটি রুপ থেকে ? কেন স্তন্যপায়ীরা তাদের মাথা এবং মুখ মন্ডল তৈরী করে সেই একটি ভ্রুণতাত্ত্বিক কাঠামো থেকে যা মাছের ক্ষেত্রে ফুলকায় রুপান্তরিত হয়? কেন মেরুদন্ডীদের রক্ত পরিসঞ্চালন তন্ত্র এত আকা বাকা জটিল প্রক্রিয়ায় নানা পরিবর্তনের ধাপ অতিক্রম করে? কেন মানুষের ভ্রুণ কিংবা গিরগিটির ভ্রুণ তাদের ক্রমবিকাশ শুরু করেনা তাদের পুর্ণাবস্থার বা অ্যাডাল্ট অবস্থার পরিসঞ্চালন তন্ত্র দিয়ে, কেনই বা আগে যা বিবর্তিত হয়েছিল, সেখানে যথেষ্ট পরিমান পরিবর্তন করতে হয়? কেনই বা আমাদের ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশে ধারাবাহিকতা আমাদের পুর্বসুরী প্রানীদের সেই ক্রম ধারাবাহিকতাকেই অনুকরণ করে ( যেমন মাছ থেকে উভচরী থেকে সরীসৃপ থেকে স্তন্যপায়ী? যেমনটা ডারউইন যুক্তি দেখিয়েছিলেন তার দি অরিজিন অব স্পিসিস এ, এটি এজন্য নয় যে, মানব ভ্রুণদের ধারাবাহিকভাবে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের মুখোমুখি হবার অভিজ্ঞতা হয় তাদের ক্রমবিকাশের সময়, যে পরিস্থিতিগুলোর সাথে তাদের অবশ্যই পর্যায়ক্রমে খাপ খাইয়ে নিতে হয় – প্রথমে মাছ এর মত একটি পর্যায়, তারপর সরীসৃপের মত এবং এভাবে এর পরের পর্যায়গুলো:
সে গঠনগত কাঠামোয়, একই শ্রেনীর ব্যপকভাবে ভিন্ন প্রানীদের ভ্রুণগুলো পারস্পরিক সদৃশ্যতা দেখা যায়, তা প্রায়শই তারা যে পরিস্থিতিতে অস্তিত্বশীল তাদের মধ্যে কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক খুজে পাওয়া যায় না; যেমন আমরা ধারনা করতে পারিনা যে করতে যে মেরুদন্ডী প্রানীদের কোন ভ্রুনে ব্র্যাঙ্কিয়াল আর্চের ছিদ্রর কাছে কোন ধমনীর অদ্ভুত লুপ সদৃশ গতিপথ একই পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট – যেমর কোন তরুন স্তন্যপায়ী প্রানী, যা তার মায়ের গর্ভে থাকার সময় পুষ্টি লাভ করে, কিংবা কোন পাখির ডিম, যা তাদের বানানো নীড়ে পাখিরা যাদের পাড়ে, কিংবা পানির নীচে ব্যাঙের একগুচ্ছ ডিমে।
ছবি: ভ্রুণ থাকাকালীন অবস্থায় মানুষের রক্তনালীগুলো যা শুরু হয়েছিল মাছ ভ্রুণ এর অনুরুপ, যেখানে উপরের এবং নীচের নালী বেশ কিছু সমান্তরাল নালীর সাথে সংযুক্ত থাকে, প্রতি পাশে একটি করে ( অ্যাওর্টিক আর্চ); মাছের ক্ষেত্রে এই সব পাশের নালীগুলো ফুলকার দিকে ও সেখান থেকে রক্ত বহন করে; ভ্রুণ এবং পুর্ণাবস্থার মাছে এরকম ছয় জোড়া অ্যাওর্টিক আর্চ থাকে; এবং এটাই মুল কাঠামো যা সকল মেরুদন্ডী প্রানীদের ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের শুরুতে আবির্ভুত হতে দেখা যায়। মানুষের ভ্রুণে প্রথম, দ্বিতীয় এবং পঞ্চম আর্চ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিকাশের শুরুতে সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেটি অপসৃত হয় ভ্রুণের চার সপ্তাহ বয়স হবার সময়ে, যখন তৃতীয়, চতুর্থ এবং ষষ্ঠ আর্চ ( ছবিতে হালকা ধুসর রঙ ভিন্ন একটি শেড ব্যবহার করা হয়েছে) সৃষ্টি হয়; ৭ সপ্তাহর মধ্যে ভ্রুণতাত্ত্বিক আর্চগুলো আবার নিজেদের নতুন করে সাজিয়ে নেয়, যা দেখতে সরীসৃপ ভ্রুণের রক্ত নালিকাদের মত দেখতে হয়।এবং সবশেষে পুর্ণাবস্থার যে বিন্যাস সেভাবে সাজিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় রক্ত নালিকাগুলো আরো বিন্যস্ত হয়, কিছু অপসৃত হয় বা রুপান্তরিত হয় ভিন্ন নালিকায়; মাছের অ্যাওর্টিক আর্চ কিন্তু এধরনের কোন রুপান্তরের মধ্য দিয়ে যায় না।
একটি বিবর্তীয় প্রক্রিয়ার অনুক্রমটির মুল বিষয়গুলোর পুণরাবৃত্তি বা রিক্যাপিচুলেশন দেখা যায় অন্যান্য অঙ্গগুলোর বিকাশের সময় – আমাদের কিডনী, যেমন। বিকাশের সময়, মানুষের ভ্রুণ আসলে তিন ধরনের কিডনী তৈরী করে, একটার পর একটা, প্রথম দুটো বাতিল হবার আমাদের মুল কিডনীর আবির্ভাব ঘটে, এবং এই সব সাময়িক কিডনীগুলো জীবাশ্ম রেকর্ডে আমাদের আগে বিবর্তিত হওয়া প্রজাতিদের মধ্যে দেখতে পাওয়া কিডনীদের মত – যথাক্রমে চোয়ালবিহীন মাছ এবং সরীসৃপ।এর অর্থ কি?
আপনি এই প্রশ্নের খানিকটা উপরি উত্তর দিতে পারেন এভাবে: প্রতিটি মেরুদন্ডী প্রানী ধারাবাহিক কয়েকটি ধাপে বা পর্যায়ে তাদের ক্রমবিকাশ পক্রিয়াটা সম্পন্ন করে এবং সেই ধাপগুলোতে তারা তাদের পুর্বসুরী প্রানীদের বিবর্তনীয় ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে। সুতরাং উদহারন সরুপ, কোন একটি সরীসৃপ, লিজার্ড তার বিকাশ শুরু করে প্রথমে মাছের ভ্রুনের মত করে, তারপর তারা উভচরী প্রানীদের ভ্রুণের রুপ ধারন করে এবং সবশেষে সরীসৃপের ভ্রুণ; স্তন্যপায়ীরা একই ধারাবাহিকতায় বিকশিত হয়, এবং শুধু শেষে যোগ হয় স্তন্যপায়ীদের ভ্রুনের শেষ ধাপটি,
এই উত্তর ঠিক আছে কিন্তু আরো গভীর কিছু প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় এখানে।কেন এভাবে ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশ প্রক্রিয়াটি ঘটে ? কেন প্রাকৃতিক নির্বাচন মানুষের ভ্রুণে ‘মাছ ভ্রুণ’ পর্যায়টি অপসারন করেনি, কারন লেজ, মাছের মত গিল বা ফুলকা আর্চ আর মাছের মত পরিসঞ্চালন তন্ত্রের সমন্বয় তো মানব ভ্রুনের জন্য প্রয়োজনীয় না? কেন আমরা ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ হিসাবে আমাদের যাত্রা শুরু করিনা – যেমনটা সপ্তদশ শতাব্দী জীববিজ্ঞানীরা ভাবতেন আমরা যাত্রা করি – এবং ধীরে ধীরে আকারে বড় হই না কেন জন্ম হওয়া পর্যন্ত ? কেন এই পরিবর্তন এবং নতুন করে সজ্জা বা রিঅ্যারেন্জমেন্ট?
এর সম্ভাব্য উত্তর – এবং ভালোএকটি উত্তর হচ্ছে – শনাক্ত করা যে একটি প্রজাতি অন্য একটি প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়, এবং উত্তরসুরীরা তাদের পুর্বসুরীদের ডেভোলপমেন্ট পোগ্রাম বা ক্রমবিকাশের নীল নকশা উত্তরাধিকার সুত্রে পায়: অর্থাৎ প্রাচীন কাঠামো তৈরীর সব জীন তারা পাচ্ছে; এবং ভ্রুনগত ক্রমবিকাশ বা ডেভোলপমেন্ট কিন্তু খুবই রক্ষনশীল একটি প্রক্রিয়া, অনেক কাঠামো যা ভ্রুন বিকাশের পরবর্তী পর্যায়ে তৈরী হয়, তাদের আবির্ভাব নির্ভর করে আগে আবির্ভুত হওয়া বৈশিষ্টগুলোথেকে আসা নানা প্রাণরাসায়নিক ’সংকেত’ এর উপর। যদি, উদহারন সরুপ, আপনি পরিসঞ্চালন তন্ত্রকে ভ্রুণ বিকাশের শুরুতে নাড়াচাড়া করে রিমডেল করার চেষ্টা করেন, আপনি তাহলে হয়তো নানা ধরনের বিরুপ প্বার্শপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবেন অন্য কাঠামোগুলো তৈরীতে, যেমন হাড়, সেজন্য সেটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই ক্ষতিকর প্বার্শপ্রতিক্রিয়া এড়াতে, স্বভাবতই অনেক সহজ শুধুমাত্র কম নাটকীয় পরিবর্তন সহ ইতিমধ্যে মজবুত এবং মৌলিক ডেভোলপমেন্টাল পরিকল্পনাকে প্রাথমিক কাঠামো হিসাবে ব্যবহার করা।সবচে ভালো হয় যা পরবর্তীতে বিবর্তিত হবে তা ভ্রুনে পরবর্তীতে বিকাশ হবার জন্য প্রোগ্রাম করা হলে।
এই ’পুরোনো জিনিসের সাথে নতুন কিছু যোগ করা’র মুলনীতি আরো ব্যাখ্যা করে কেন বিকাশগত পরিবর্তনের অনুক্রম প্রজাতির বিবর্তনের অনুক্রমটিকেই অনুকরণ করে।একটি গ্রুপ যখন অন্য গ্রুপ থেকে বিবর্তিত হয়, প্রায়শই তখন এটি তার ক্রমবিকাশের জন্য প্রোগ্রামটি পুরোনো ইতিমধ্যে বিদ্যমার প্রোগ্রামের উপর যোগ করে।
এই মুলনীতিটাকে মনে রেখে আর্ণষ্ট হেকেল, জার্মান বিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং ডারউইনের সমকালীন, একটি বায়োজেনেটিক সুত্র প্রণয়ন করেন ১৮৬৬ সালে।যা বিখ্যাত ভাবে সংক্ষিপ্ত করা হয় ”অনটোজেনি রিক্যাপিচুলেট ফাইলোজেনী” বাক্যটি দ্বারা। এর অর্থ হচ্ছে কোন জীবে ডেভোলপমেন্ট বা বিকাশ তার বিবর্তনীয় ইতিহাসকে পুণপ্রদর্শন করে।কিন্তু এই ধারনাটি সত্যি খানিকটা সীমিত আকারে; ভ্রুণ বিকাশের ধাপগুলো তাদের পুর্বসুরীদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থার কোন রুপ ধারণ করে না যেমনটা হেকেল দাবী করেছিলেন, বরং তাদের পুর্বসুরীদের ভ্রুণের রুপের মত আকার তারা প্রদর্শন করে। মানব ভ্রুণ যেমন কখনো পুর্ণবয়স্ক মাছ কিংবা সরীসৃপের মত দেখতে হয় না ঠিকই কিন্তু তারা ভ্রুণ মাছ আর সরীসৃপের মত দেখতে হয় বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট উপায়ে। তাছাড়া এই রিক্যাপিচুলেশন বা পুরোনো গুরুত্বপুর্ণ বৈশিষ্টগুলোর পুনরাবির্ভাব প্রক্রিয়া খুব কঠোরভাবে নিয়মসিদ্ধ কিংবা আবশ্যিক নয়: পুর্বসুরীদের ভ্রুনের সব বৈশিষ্ট তাদের উত্তরসুরীদের ভ্র মধ্যে প্রকাশিত হয়না, যেমন বিকাশে প্রতিটি ধাপও কঠোর ভাবে বিবর্তনীয় ধাপ মোতাবেক আবির্ভুত হয় না।উপরন্তু কিছু প্রজাতিতে, যেমন উদ্ভিদ তাদের পুর্বসুরীদের সকল বৈশিষ্টই বিকাশের সময় বর্জন করতে পেরেছে, হেকেল এর আইন তার সুখ্যাতি হারায় কারন শুধুমাত্র এটি কঠোরভাবে সত্য না এবং শুধু তাই না, হেকেল অভিযুক্ত হয়েছিলেন, যদিও সঠিকভাবে নয়, পুরোনো কিছু ভ্রুণের ছবিকে অস্পষ্ট করে দেবার জন্য, যার উদ্দেশ্য ছিল তারা যতটা না আসলেই পরস্পর সদৃশ্য তারচেয়ে বেশী সেটা প্রদর্শন করা। কিন্তু কিছু খারাপ জিনিস বাদ দিতে গিয়ে আমাদের ভালো জিনিসটা ফেলে দেয়া উচিৎ হবে না। ভ্রুণ তাস্বত্ত্বে একধরনের রিক্যাপিচুলেশন প্রদর্শন করে: অর্থাৎ যে বৈশিষ্টগুলো বিবর্তনের আগে পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছিল অনেক সময় তা পুনরায় আবির্ভুত হয় ভ্রুনতাত্তিক বিকাশের প্রাথমিক অবস্থায়। এবং এটির অর্থবহ হতে পারে তখনই যখন শুধুমাত্র প্রজাতিদের একটি বিবর্তনীয় ইতিহাস থাকে।
এখন আমরা পুরোপরি নিশ্চিৎ না কেন কিছু প্রজাতি তাদের বেশ কিছু বিবর্তনীয় ইতিহাস ধরে রাখে তাদের ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের সময়। ”পুরোনো জিনিসের মধ্যে নতুন কিছু যোগ করা”র মুলনীতি আসলে একটি হাইপোথিসিস –ভ্রুনতত্ত্ববিদ্যার কিছু বাস্তব তথ্যকে ব্যাখ্যাকারী একটি প্রস্তাব। প্রমান করা কঠিন যে কোন একটি ভ্রুন বিকাশ প্রক্রিয়ার প্রোগ্রাম ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি দিকের মধ্যে কোন বিশেষ একটি দিকে অপেক্ষাকৃত সহজে কাজ করতে পারে; কিন্তু এতে এমব্রায়োলজীর বাস্তবতার কোন পরিবর্তন হয় না এবং শুধুমাত্র বিবর্তনের ব্যাখ্যায় এটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। সব মেরুদন্ডী প্রানী তাদের যাত্রা শুরু করে ভ্রুনাবস্থায় ভ্রুন মাছের মত একটি রুপ থেকে, কারন আমরা সবাই বিবর্তিত হয়েছি মাছের মত পুর্বসুরী প্রানী থেকে যার মাছের মতই ভ্রুণ ছিল। আমরা বিভিন্ন অঙ্গ, রক্তনালী্ এবং ফুলকা ছিদ্র নানা স্থান পরিবর্তন, কসরত, অপসৃত হতে দেখি, কারন উত্তরসুরী প্রানীরা এখনও পুর্বসুরীদের সেই জীন এবং বিকাশের প্রোগ্রাম বহন করে চলেছে: এই বিকাশের সময়ে পরিবর্তনের ধারাবাহিক অনুক্রম অর্থবহ হয়: কোন একটি ধাপে স্তন্যপায়ীদের সরীসৃপদের মত একটি পরিসঞ্চালন তন্ত্র ছিল, কিন্তু আমরা সরীসৃপ ভ্রুনের ক্ষেত্রে এর উল্টোটা দেখি না, কেন? কারন স্তন্যপায়ীরা বিবর্তিত হয়েছে আদি সরিসৃপ থেকে এর উল্টোটা না।
ডারউইন যখন দি অরিজিন লিখেছিলেন, তিনি এমব্রায়োলজীকে তার বিবর্তন তত্ত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমান হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। বর্তমান সময়ে হলে, তিনি সেই গর্বিত জায়গাটা হয়তো জীবাশ্ম রেকর্ডকে দিতেন। যাইহোক, বিজ্ঞান বিবর্তনকে সমর্থন করে এমন সব বিস্ময়কর বৈশিষ্টগুলো ক্রমশ সঞ্চয় করে চলেছে। ভ্রুণ তিমি এবং ডলফিন তাদের পেছনের পায়ের বাড তৈরী করে –বাড হচ্ছে একগুচ্ছ কোষের একটি স্ফীতকায় অংশ, এবং চারপেয়ে স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে যেখান থেকে পেছনের পা তৈরী হয়। কিন্তু সামুদ্রিক প্রানীদের এই বাডটি অপসারিত হয়ে যায় তাদের তৈরী হবার পর পরই। উপরের ছবি দেখাচ্ছে এই বিকাশের পশ্চাদমুখী অপসরণটি স্পটেড ডলফিনদের ক্ষেত্রে। বালীন তিমিদের দাত নেই কিন্তু যেহেতু তাদের পুর্বসুরীরা সবাই দাত যুক্ত তিমি, তারা ভ্রুণাবস্থায় দাত তৈরী করে যা জন্মের আগেই অপসারিত হয়ে যায়।
আমার প্রিয় বিবর্তনের ভ্রুনতাত্ত্বিক প্রমানের একটি উদহারন হলো লোম যুক্ত মানব ভ্রুণ; আমরা সুপরিচিত ন্যাকেড বা লোমহীন এইপ হিসাবে কারন অন্য প্রাইমেটদের ব্যতিক্রম আমাদের চামড়ায় চুলের মোটা স্তর থাকে না, কিন্তু আসলে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আমাদের সেটা থাকে – ভ্রুণাবস্থায়। আমাদের ভ্রুনাবস্থা শুরু হবার ৬ মাস পর, আমদের শরীর পুরোপুরি ঢেকে যায় হালকা, নরম চুলের একটি স্তরে যাকে বলে লানুগো (lanugo)। লানুগো সাধারনত জন্ম হবার মাস খানেক আমাদের চামড়া থেকে ঝরে পড়ে, এবং এর জায়গা নেয় আরো হালকা ভাবে ছড়ানো চুলে যা নিয়ে আমাদের জন্ম হয় ( প্রিম্যাচিউর বাচ্চা, যদিও কখনো কখনো লানুগো নিয়েই জন্ম লাভ করে, তবে সেটি শীঘ্রই পড়ে যায়), কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে মানুষের ভ্রুণের তো এই সাময়িক চুলের স্তরের কোন প্রয়োজন নেই, কারন মাতৃগর্ভে তো আরামদায়ক ৩৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাই থাকে। লানুগোর উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে আমাদের প্রাইমেট বংশঐতিহ্যের একটি রয়ে যাওয়া চিহ্ন হিসাবে: বানরদের ভ্রুণ প্রায় একই সময়ে চুলের একটি স্তর তৈরী করে তাদের ক্রমবিকাশের সময়, তাদের সেই চুল, অবশ্য পড়ে যায়না এবং জন্মের পরেও তা থাকে এবং পুর্ণাবস্থায় লোমশ একটি স্তর তৈরী করে তাদের চামড়ায়। এবং মানুষের মত তিমির ভ্রুণেরও লানুগো তৈরী করে, এটিও তাদের পুর্বসুরীরা স্থলনিবাসী ছিল তার চিহ্নই বহন করে।
ছবি: স্পটেড ডলফিনদের (Stenella Attenuata) অপসৃত হয়ে যাওয়া পেছনের লিম্ব এর কাঠামো –যা তাদের চারপেয়ে পুর্বসুরীদের বিবর্তনীয় অবশেষ। ২৪ দিন বয়সী ভ্রুণ (বায়ে) এর হাইন্ড লিম্ব বাড (একটি ত্রিভুজ দিয়ে দেখানো হয়েছে) ভালোভাবে বিকশিত হয়, শুধু সামনের বা ফোর লিম্ব বাড থেকে খানিকটা ছোট, ৪৮ দিন বয়সী ভ্রুণে (ডানে) পেছনের বাড সম্পুর্ণ অপসৃত হয়, কিন্তু সামনের লিম্ব বাডটি বাড়তে থাকে যা পরবর্তী ফ্লিপার তৈরী করে);
মানুষের ক্ষেত্রে শেষ উদহারনটি আমাদের ধারনার জগতে নিয়ে যাবে, তারপরও এর আবেদন যথেষ্ট এটিকে আলোচনায় বাদ না দেবার জন্য। সেটা হলো গ্র্যাস্পিং রিফ্লেক্স যা সদ্যজাত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, যদি আপনার সুযোগ থাকে সদ্যজাত বা ১ বা ২ মাস বয়সের ছোট বাচ্চার কাছে যাবার, তার হাতের তালুতে হালকা করে টোকা দিন, বাচ্চাটি একটি রিফ্লেক্স প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে, সে আপনার আঙ্গুলটা আকড়ে ধরবে, এবং এই আকড়ে ধরাটার যথেষ্ট শক্তিশালী যে দুই হাতে এই শক্ত করে ধরাটা কোন একটি ঝাড়ুর লাঠি ধরে কয়েক মিনিট ঝুলে থাকার মত যথেষ্ট ( সতর্কবানী: এই পরীক্ষাটি দয়া করে বাসায় করবেন না), এই গ্রাস্পিং রিফ্লেক্স জন্মের যা কয়েক মাসের মধ্যেই হারিয়ে যায়, একটি অ্যাটাভিস্টিক আচরণ হতে পারে।সদ্যজাত বানর এবং এইপদের এই রিফ্লেক্স আছে, কিন্তু এটি পুরো শৈশব জুড়েই থাকেই, যা এসব প্রানীদের শিশুদের মায়ের চামড়া ধরে ঝুলে থাকতে সাহায্য করে তাদের বহন করার সময়।
দু:খজনক ব্যাপার হলো, যদিও এমব্রায়োলজী বা ভ্রুণতত্ত্ব বিবর্তনের স্বপক্ষে নানা প্রমানের সমৃদ্ধ খনি হওয়া সত্ত্বেও, এ বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকগুলো প্রায়ই সে প্রমানগুলো উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়।আমি ধাত্রীবিশেষজ্ঞদের দেখেছি, যেমন, যারা লানুগো সম্বন্ধে সব জানেন শুধু কেন এটি আবির্ভাব হয় মানুষের ভ্রুণে সেটা ছাড়া।
এছাড়া ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের নানা বিশেষত্ত্ব তো আছেই, এছাড়া আরো বিশেষত্ত্ব আছে জীবদের গঠনে যা শুধুমাত্র বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এই কেসগুলো হচ্ছে তথাকথিত ব্যাড ডিজাইনের কেস।
________________________________________________ চলবে