লুই পাস্তুর আর রবার্ট কখ এর সমসাময়িক ছিলেন তিনি, কিন্তু তাদের মত পরিচিতি পাননি ডাচ মাইক্রোবায়োলজিষ্ট মার্টিনাস ভিলেম বেইজেরিন্ক (Martinus Willem Beijerinck : March 16, 1851 – January 1, 1931) ) কোন দিনও,অথচ অনুজীববিজ্ঞানের অনেক মৌলিক গবেষনা এসেছিল এই চিরকুমার ডাচ বিজ্ঞানীর Delft Polytechnic School এর মাইক্রোবায়োলজী ল্যাব থেকে। এর একটি কারণ সম্ভবত তিনি কখনো মানুষের অসুখ নিয়ে গবেষনা করেননি।
তবে ১৯৯৫ সালে শেষের দিকে নেদারল্যান্ডের হেগে সেই ভুলটিকে শোধরানোর জন্য জড়ো হয়েছিলেন মাইক্রোবায়োলজিষ্ট আর ইতিহাসবিদরা .. Beijerinck Centennial – Microbiology Physiology and Gene Regulation: Emerging Principle and Application শীর্ষক এক সম্মেলনে;
বেইজেরিন্ক ১৮৯৮ সালে তামাকে মোজাইক রোগের কারন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন এমন একটি জীবানুকে যে কিনা ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্ষুদ্রতর, একই পর্যবেক্ষন ছিল Dmitri Ivanovsky আর Adolf Mayer এরও, তারা কেউই সেই জীবানুটিকে কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরীতে চাষ করতে পারেননি, কিন্তু বেইজেরিন্ক অন্যরা যা করেননি সেটি করেছিলেন, তিনি প্রমান করেছিলেন শুধু মাত্র জীবন্ত গাছের পাতায় তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে, জীবন্ত কোষেই এদের উপস্থিতির প্রমান দেয়া সম্ভব; তিনি নতুন এই জীবানুর নাম দিয়েছিলেন ভাইরাস (Virus), এটি যে ব্যাকটেরিয়া নয় সেটি নির্দিষ্ট করার উদ্দেশ্যে (((ভাইরাস শব্দটি এসেছে ল্যাটিন থেকে .. যার অর্থ বিষ, ইংরেজী ভাষায় শব্দটি প্রবেশ করেছিল ১৩৯২ সালে)); তার ধারনা ছিল এই নতুন জীবানুটি নিশ্চয়ই বিষের মত তরল কিছু, বা contagium vivum fluidum (contagious living fluid); ১৯৩৫ সালে Wendell Stanley অবশ্য প্রমান করেন এটি তরল নয়, আর ১৯৩৯ সালে TMV ( Tobacco Mosaic Virus) কেমন দেখতে তার প্রমান মেলে ইলেক্ট্রণ মাইক্রোস্কোপের নীচে, আর ১৯৪১ সালে আমরা জানতে পারি আসলে ভাইরাস তরল নয়, এটা পার্টিকেলের মত দেখতে ও আচরণে (((( খুব সম্ভবত কয়েক মিলিয়ন ভাইরাস আছে, প্রায় সব ধরনের ইকোসিস্টেমে ভাইরাসের দেখা মিলেছে, যদিও আমরা আপাতত ৫০০০ এর মত ভাইরাস সম্বন্ধে জেনেছি))); আর সে কারনেই ভাইরোলজীর জনক বলা হয় তাকে।
কিন্তু মাইক্রোবায়োলজীর আরো কিছু পাইওনিয়ারিং রিসার্চ ছিল তার, যেমন তার একটি অসাধারন কাজ ছিল nitrogen fixation আবিষ্কার করা, তিনি দেখিয়েছিলেন কিভাবে কিছু উদ্ভিদের মুলে থাকা ব্যাকটেরিয়ারা বায়ুমন্ডলের Nitrogen কে রুপান্তর করে অ্যামোনিয়াম আয়নে, যা উদ্ভিদরা ব্যবহার করতে পারে। মাটির উর্বরতার জন্য গুরুত্বপুর্ণ এই বিক্রিয়াটি আবিষ্কার করা ছাড়াও তিনি প্রথম বারের মত উদ্ভিদ আর অনুজীবদের মিথোজীবিতার উদহারনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি আবিষ্কার করেছিলেন ব্যাকটেরিয়ারা সালফেট ব্যবহার করতে পারে অক্সিজেনের বদলে, সেটি গুরুত্বপুর্ণ ছিল আমাদের biogeochemical cycles সম্বন্ধে আধুনিক ধারনাটিতে পৌছাতে।Spirillum desulfuricans, সালফেট ব্যবহারকারী এই ব্যকটেরিয়ার সন্ধানও পেয়েছিলেন বেইজেরিন্ক। তিনি enrichment culture এর মুলনীতিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বহু ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার জন্য গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। তার গবেষনা কাছে সমস্যা করবে বলে তিনি চিরকুমার ছিলেন, এছাড়া সামাজিক নানা অদক্ষতাও ছিলো একজন ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানীর যেমন থাকে, ভীষন ভালো বাসতেন তার গবেষনাকে, নিজের দুই বোন আর বন্ধু একটি রসায়নবিদ ছাড়া সামাজিক ভাবে তিনি কারো সাথে ঘনিষ্ট ছিলেন না। তার অতি উৎসাহ আর অদ্ভুত আচরন তার ছাত্রদের মধ্যে তাকে মোটেও জনপ্রিয় করেনি, এজন্য তার খানিকটা দু:খ ছিল। বেশ কিছু গরুত্বপুর্ণ পুরষ্কার আর সন্মানে তাকে ভুষিত করা হয়েছিল; মৃত্যু অবধি গবেষনা করেছিলেন .. ১৯৩১ সালের প্রথম দিনে তিনি নীরবে মৃত্যুবরণ করেন।